
ওয়াসিফুর রহমান, ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি জটিলতা দূর করে আইন প্রণয়ন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রদানসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।
আজ বুধবার (২৫ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহকে একটি স্মারকলিপি দেয় সংগঠনটি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন শাখা সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাব্বির প্রমুখ।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১০ দফা দাবি নিচে তুলে ধরা হলো:
১। কোটার হার সংস্কার: অগণিত প্রাণের বিনিময়ে আমরা দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে সফল হয়েছি। যে কোটার বিরুদ্ধে এত কিছু, এখনো আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে দেখতে পাচ্ছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় পোষ্য কোটার মতো কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। অনতিবিলম্বে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ও প্রতিবন্ধী কোটা ব্যতীত অন্যান্য অযৌক্তিক সকল কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।
২। সড়ক সংস্কার : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা শহরের মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ায় প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের সড়ক পথে যাতায়াত করতে হয়। বিভিন্ন সময় এই কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে আমাদের ভাইবোনেরা সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তাই অতিদ্রুত কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংস্কার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সরকারের সাথে যোগাযোগ করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩। মেয়েদের নামাজের স্থান নির্ধারণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদেরদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রতিটি আবাসিক হলে এবং প্রায় প্রতিটি বিভাগে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজ আদায়ের সুযোগের অভাব রয়েছে। কিছু কিছু জায়গা নামাজের জায়গা আলাদা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই অতিদ্রুত আমাদের দ্বীনি বোনদের জন্য নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪। সেশনজট নিরসন: করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছিল তার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই গতবছর শিক্ষকদের পেনশন সংক্রান্ত কর্মবিরতি এবং জুলাই আন্দোলনে কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা-কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় আবারও সেশনজটের কবলে পড়েছে। তাই সেশনজট নিরসনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫। ভর্তি ফি হ্রাস: ভর্তি ফি কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার সপ্ন বিলীন না হয়ে যায় এবং সামর্থ্যের ভিতরে থাকে!
৬। ইকসু আইন প্রণয়ন ও ইকসু গঠন : গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম ক্ষেত্র ইকসু গঠন ইবির জন্মলগ্ন থেকে থমকে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের চাহিদার আলোকে ও নেতৃত্ব বিকাশ এবং সুন্দর ক্যাম্পাস বিনির্মানে ইকসু আইন প্রণয়ন ও দ্রুততম সকল আইনি জটিলতা কাটিয়ে ইকসু রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
৭। সুপেয় পানির জন্য ফিল্টার স্থাপন: বিভিন্ন অনুষদ ও ভবনে বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিটি ভবনে আধুনিক ও কার্যকর পানির ফিল্টার স্থাপন করতে হবে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পুর্বে স্থাপিত টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সেদিকে নজর দিয়ে টিউবওয়েল গুলো পুনরায় সচল করতে হবে।
৮। সনদ উত্তোলনে ভোগান্তি নিরসন: বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে সনদপত্র, নম্বরপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনে শিক্ষার্থীরা বারবার হেনস্থার শিকার হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে একাডেমিক শাখায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিহীন সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বে তদারকি করতে মনিটরিং সেল তৈরিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৯। নারী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরাক্ষা : নারী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হল সমুহে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করে হাইজিন সামগ্রী (স্যানিটারি ন্যাপকিন, টিস্যু) ও
ওষুধ (ব্যথানাশক, প্রাথমিক চিকিৎসার পণ্য) সরবরাহ নিশ্চিত করা।
১০। বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের সেবা উন্নতকরণ : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে মানসম্মত ওষুধের ঘাটতি ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের আধুনিকীকরণ নিশ্চিত ও দায়িত্বরতদের দায়িত্ব তদারকিতে মনিটরিং সেল তৈরি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে