মোস্তফা কামাল মামুন,
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে একটি বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে চীন সরকার।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে 'চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল' নামে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। হাসপাতাল স্থাপনের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং উত্তরবঙ্গে উপযুক্ত জমি খোঁজা হচ্ছে।
চীনের সহায়তায় ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি আধুনিক হাসপাতাল, যা উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য এক নতুন চিকিৎসা সুবিধার দ্বার উন্মোচন করবে। কিন্তু এই হাসপাতাল কোথায় স্থাপন হবে—তা নিয়ে এখনো চলছে আলোচনা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, অনেকেই মনে করছেন যে হাসপাতালটি কুড়িগ্রামেই হওয়া উচিত, এবং এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি।
উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইতোমধ্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আরেকটি বৃহৎ হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে, তা পুরাতন হাসপাতালের কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে—এমনটি বলছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়াও, নীলফামারী ও দিনাজপুরেও রয়েছে আলাদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তাই হাসপাতালের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান অত্যন্ত জরুরি।
কুড়িগ্রাম হতে পারে সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। কেননা, এটি নদীতীরবর্তী জেলা হওয়ায় রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার মানুষ সহজেই নদীপথে যাতায়াত করে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারবে। এতে চিকিৎসা সেবার সুবিধা আরও বিস্তৃত হবে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আধুনিক চিকিৎসার আওতায় আসবে।
"সাপ্তাহিক কুড়িগ্রাম সংবাদ" পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে "কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ" মীর্জা মোঃ নাসির উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত 'ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল'স্থাপনে অবকাঠামো ও দুই দেশের আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা দেখার জন্য ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক গত ২৮ মার্চ/২০২৪ কুড়িগ্রামে আসেন। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা শহরের পূর্ব পাশে ধরলা ব্রিজের পূর্বে কুড়িগ্রাম-সোনাহাট স্থলবন্দর মহাসড়কের পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর জায়গা পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী সারা ভুটানে ৩২ টি হাসপাতাল আছে। এ হাসপাতাল গুলোতে জটিল রোগের চিকিৎসা দেয়া হয় না। জটিল রোগের ক্ষেত্রে তাদেরকে বাইরের দেশে চিকিৎসা নিতে হয়। ভূটানে কোনো মেডিকেল কলেজে না থাকায় সেখানকার অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশে, বিশেষ করে রংপুর মেডিকেল কলেজ, কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এবং প্রাইম মেডিকেল কলেজ, রংপুরে পড়াশোনা করছে।
কুড়িগ্রামে এ ধরণের একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলে ভূটান থেকে শুধু শিক্ষার্থীই নয় অনেক রোগীও চিকিৎসা নিতে আসবে। সেক্ষেত্রে কুড়িগ্রাম হলে তাদের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক সহজ হবে এবং খরচও অনেক কম পড়বে।
নেপাল এবং প্রতিবেশী দেশের কয়েকটি রাজ্য থেকেও সড়ক ও নৌ পথে সহজে রোগী সহ লোকজন আসতে পারবে। ফলে এ অঞ্চলে চিকিৎসা হাব প্রতিষ্ঠাসহ মেডিকেল ট্যুরিজমের বিকাশ ঘটবে।
বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষায় বেসরকারিতে অবকাঠামোগত কিছু দুর্বলতা থাকলেও পড়াশোনার মান ভালো। শিক্ষার্থীরা এখান থেকে পাশ করে নিজের দেশের এন্ট্রি পরীক্ষায় রাশিয়া, চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক ভালো ফল করছে।
বর্তমানে ভারতের ১২ হাজার শিক্ষার্থী বাংলাদেশের মেডিকেলে অধ্যয়ন করছে। বিশেষ করে ভারতের দিল্লি, কাশ্মীর, কলকাতা, আসাম, হায়দরাবাদ এবং পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভুটান, মালদ্বীপ ও নেপাল ছাড়াও ফিলিস্তিন, থাইল্যান্ড মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে পড়তে আসছে।
চীনের প্রস্তাবিত টারশিয়ারি হাসপাতলটিকে ভবিষ্যতে মেডিকেল কলেজে রুপান্তর করলে
সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অভাব হবে না।
কুড়িগ্রামবাসীর প্রত্যাশা, এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানবিকতা, ভৌগোলিক অবস্থান ও চিকিৎসা সেবার ভারসাম্য বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
উত্তরবঙ্গের মানুষের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে, হাসপাতালটি কুড়িগ্রামে হওয়া এখন সময়ের দাবি।
সম্পাদক : অ্যাডভোকেট খাজা ময়েনউদ্দিন চিশতি।
সহ-সম্পাদক: রোকনুজ্জমান রুবেল।
নির্বাহী সম্পাদক : শাহজামাল শাওন।
উপদেষ্টা : অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন দুলাল,ব্যারিষ্টার রাজু মিয়া বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট, আতাউর রহমান।
Address: ka-1/1(1st Floor),Jagannathpur,Bashundhara Road,Vatara 1229 Dhaka,Bangladesh
E-mail : sdpratidin@gmail.com
WhatsApp/Mobile : 01750848796
Design & Development By HosterCube Ltd.